নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী জার্নাল: নরসিংদীর মনোহরদীতে ঈদ পরবর্তী নৌ ভ্রমনের চাঁদার টাকা ফেরত চাওযায় আকরাম হোসেন শ্রাবণ (২২) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসময় পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় শ্রাবণের মামা সাখাওয়াত হোসেনকেও। গত সোমবার রাত ৯ টায় উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের একদুয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনার সাথে জড়িত দুইজনকে কাপাসিয়ার সনমানিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে মঙ্গলবার দুপুরে দুইজনের নাম উল্লেখ করে ৪ থেকে ৫ জন অজ্ঞাতনামার নামে মনোহরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন শ্রাবণের বাবা মো. শাহজাহান। নিহত আকরাম হোসেন শ্রাবণ উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের কামার আলগী এলাকার মো শাহজাহানের ছেলে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের আসাদ মিয়ার ছেলে হ্নদয় মিয়া (১৮) ও রান্দনদিয়া এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে মৃদুল মিয়া (১৬)। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৫ জুলাই রোববার হ্নদয়ের নেতৃত্বে একদুয়ারিয়া এলাকার ৭৩ জন ছেলে পাশ্ববর্তী শিবপুর উপজেলার লাখপুর শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকা ভ্রমনে যায়।
এজন্য সবার কাছ থেকে ৫০০ করে টাকা নেয়া হয়। কামার আলগী এলাকার বায়োজিদ (১৪) ও ইয়াছিন (১৭) নৌকা ভ্রমণে তাদের সাথে গিয়েছিল। করোনাকালে সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করায় নরসিংদী জেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট রিনাত ফৌজিয়া লাখপুর বেড়িবাধঁ এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে নৌকাটি আটক করে।
এসময় বিধি নিষেধ ভঙ্গের কারণে হ্নদয়, মৃদুল, বায়োজিদ ও ইয়াছিনসহ ৩২ জনকে আর্থিক জরিমানা করা হয়। যার ফলে নৌকা ভ্রমণ পন্ড হয়ে যায়। পরে বায়োজিদ ও ইয়াছিন নৌকা ভ্রমণ না করার কারণে হ্নদয়কে তাদের চাদাঁ ও জরিমানার টাকা ফেরত দিতে বলে। কিন্তু হ্নদয় তা অপরাগত জানায়। পরে তারা টাকা উদ্ধারের জন্য শ্রাবণের কাছে বিচার দেয়। শ্রাবণ টাকার জন্য হ্নদয়কে চাপ দেয়।
পরে হ্নদয় জরিমানার টাকা নেয়ার জন্য শ্রাবণকে সোমবার রাতে একদুয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আসতে বলে। পরে রাতে শ্রাবন তার মামা সাখাওয়াতকে নিয়ে স্কুলের সামনে আসলে হ্নদয় ও মুদুলসহ আরো ৪ থেকে ৫ জন তাদের উপর অর্তকিত ভাবে হামলা চালায়।
তারা বাশেঁর লাঠি ও চালা দিয়ে শ্রাবণ ও সাখাওয়াতকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্রাবণকে মৃত ঘোষণা করে। আর সাখাওয়াত মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নিহতের বাবা শাহজাহান বলেন, আমার ছেলে নৌ ভ্রমণে যায়নি। সে অন্যের ভালো করতে গিয়েছিল। কিন্তু সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য তারা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বলেন, সকালে কাপাসিয়ার সনমানিয়া এলাকায় হ্নদয়ের গ্রামের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে হ্নদয় ও মৃদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের আজকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে। আর নিহত শ্রাবণের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ করছি।