মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

বাঁশিওয়ালা বকুল ও ইরাবতী পরী

অপু সুলতান / ১১৫৯ বার
আপডেট : বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১
bashiwala_bokol_iraboti_pari_narsingdijournal
বাঁশিওয়ালা বকুল ও ইরাবতী পরী || অপু সুলতান

বকুলের মনে হচ্ছে সে সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। তাহলে কি সে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? কিন্ত হাতে যে হীরার আংটি সেটা কোথা থেকে আসলো? রাজকন্যার মতো সুদর্শন ইরাবতী পরীর কথা মনে পড়তেই বকুল মুচকী হেসে মনে মনে বলল, ‘ইরাবতী তুমি তাহলে আমায় বশ মেনে গেছে।

মধ্য দুপুরের প্রখর রৌদ্র। জনশূন্য বিশাল মাঠ। মাঠের মাঝে একটা প্রকান্ড হিজল গাছ। রোদের উত্তাপে ক্লান্ত বকুল। শরীর জুড়িয়ে নেয়ার জন্য বাঁশিতে সুর তোলেছে। জনশূন্য মাঠের দিক থেকে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছে সেই সুর। বকুলের বাঁশিতে যাদুমাখা মায়া আছে। সুরের ঢেউ খেলে চারপাশে। ছোটবেলা থেকেই মাঠে মাঠে গোরু চড়ায় বকুল। খুব ভালো বাঁশি বাজায় বলে সবাই তাকে রাখাল না বলে বাঁশিওয়ালা বকুল বলে ডাকে। মাথায় সব সময় গামছা বাঁধা থাকে। এক হাতে থাকে মুরলী বাঁশের বাঁশি অন্য হাতে থাকে পাচুনি। ক্লান্ত হলে বাঁশিতে মায়াবী সুর তোলে শরীর-মন জুড়ায়। কখনো কখনো বাঁশির সুরে গোরু-বাছুর ডাকে।
ভরদুপুরে অথবা নিশিরাতে একা একা বাঁশি বাজাতে বারণ আছে। বকুল যার কাছ থেকে বাঁশি বাজানো শিখেছে, সেই উস্তাদ তাকে নিষেধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ব্যাপারটা পরিস্কার করে বলেননি। তবে বকুল বহুজনের কাছ থেকে শুনেছে- নির্জন মধ্যদুপুরে অথবা নিশিরাতে বাঁশি বাজালে পরী নেমে আসতে পারে। সে পরী ভালো হতে পারে আবার তার ক্ষতিও করতে পারে। তবুও ক্লান্ত দুপুরে খুবই মন চাচ্ছে- তাই এক মনে বাজিয়েই যাচ্ছে। বকুল বাঁশি বাজাতে বাজাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু বাঁশি বাজানো বন্ধ করছে না।

কোনো একটা মোহ যেন তাকে চেপে ধরেছে। এমন সময় তাকে চমকে দিল অদ্ভুত এক কিন্নরকন্ঠী নারী। ‘বন্ধ কর! এই ঐন্দ্রজালিক সুর। এই সুর তুমি কোথায় পেলে? আমি সুরের জালে আটকা পড়ে গেছি। এই নির্জন প্রান্তর দিয়ে আমি গোকুল নগর যাচ্ছিলাম। আমি যেতে পারছি না। এই সুর বন্ধ কর!’ আচমকা এমন কথা শুনে বকুল প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু বাঁশির সুর ছাড়ছে না। বকুল বুঝতে পারে তার বাঁশির সুর শুনে পরী নেমে এসেছে। এখন যদি পরী তার বশে না আসে তাহলে তার বড় ধরণের ক্ষতি কর‍তে পারে। বকুল সব শক্তি দিয়ে আরও উচ্চসুরে বাঁশি বাজাতে লাগলো। পরী এবার অনেকটা নমনীয় স্বরে বলল, ‘দয়া করে বন্ধ কর, তোমার এই ঐন্দ্রজালিক সুর। কথা দিচ্ছি, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।

তোমার বাঁশির এমন মোহনীয় সুরে আমি বিমুগ্ধ। তোমার সুরের জালে আটকে গেছি আমি। তুমি আমাকে অবমুক্ত কর। কথা দিলাম- আমি ইরাবতী পরী, তোমার ডাকে আবার আসব। তুমি গোকুল নগরের ছাতিম গাছের তলায় নির্জন নিশিতে মুরলী বাঁশিতে এই ঐন্দ্রজালিক সুর তুলো, আমি অবশ্যই আসব। তুমি যা চাইবে- আমি তাই দিব। এখন আমার কাছে এই হীরার অঙ্গুরীটাই আছে, তা-ই তোমাকে দিলাম।’ ইরাবতী পরীর কথা শোনে বকুলের মায়া হল এবং আশ্বস্ত হলো যে, ইরাবতী পরী তার কোন ক্ষতি করবে না। কথামতো বকুল বাঁশি বাজানো বন্ধ করে দিল। ইরাবতী পরী এক ঝাটকায় আকাশে মিলিয়ে গেল।

বকুলের মনে হচ্ছে সে সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। তাহলে কি সে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? কিন্ত হাতে যে হীরার আংটি সেটা কোথা থেকে আসলো? রাজকন্যার মতো সুদর্শন ইরাবতী পরীর কথা মনে পড়তেই বকুল মুচকী হেসে মনে মনে বলল, ‘ইরাবতী তুমি তাহলে আমায় বশ মেনে গেছে। আমি নির্জন নিশিতে তোমার গোকূল নগরে আসব। আবার ঐন্দ্রজালিক সুরে বাঁশি বাজাব। আমি জানি তুমি আসবে ইরাবতী। কারণ পরীরা কখনও মিথ্যে বলে না।’

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ খবর মিডিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ

error: Content is protected !!
error: Content is protected !!