নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী জার্নাল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর পৌর এলাকায় গত শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। থানায় অভিযোগ দায়েরের পর মৃত মতু মিয়া’র ছেলে অভিযুক্ত জহর আলী (জল্লা) ৫০কে গ্রেফতার করে। তিনি নবীনগর পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
পরিবার সূত্রে যানা যায়, ময়মনসিংহের হত-দরিদ্র এই পরিবারটি গত ১০ বছর ধরে নবীনগর ফতেহপুর রোড সংলগ্ন বাসার মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। গত (১৬ জুলাই) রোজ শুক্রবার দুপুর ১২ ঘটিকায় পাশের একটি মুদির দোকানে সদাই নিতে আসলে একই এলাকার লম্পট জহর আলী জল্লা (৫০) শিশুটিকে নানাহ কৌশলে ডেকে নিয়ে তার ফাকা বাসায় ঘরের দরজা আটকিয়ে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করতে থাকে। শিশুটির আত্মচিৎকারে পার্শ্ববর্তীরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
শিশুটির দাদী নরসিংদী জার্নাল ডট কমকে বলেন, গত ১০ বছর ধরে তিনি এই এলাকায় ভাড়া থাকেন। আগে মানুষের বাসায় কাজ করতেন। বর্তমানে ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালান। মা হারা এই মেয়েটির বাবা ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ হওয়ায় মিয়েটিকে দাদী ছোট থেকে লালন পালন করছেন। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি আরো বলেন, মানুষের বাড়িতে অহন আর কাজ দেই না। করোনা আহনের পর থাইকা মানুষের বাড়িতে আগের মতন ঢুকতেও দেইনা। অতি কষ্টে নিজে খেয়ে না খেয়ে মাইনসের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে এ পর্যন্ত বাচ্চাডারে লালন পালন করতাছি। হেই নাতিডারে এমন সর্বনাশ করেছে। আমি এখন আমার নাতনীডারে বিয়ে দেবো কেমন করে। আমি এই বিষয়ে স্থানীয় ২-নং ওয়ার্ড কমিশনার ও মাতাব্বরদের কাছে বিচার দাবী করি। তারা এর সুষ্ট বিচার করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত ১৮ই জুলাই বাদ আছর স্থানীয় মাতব্বররা মোহন মিয়ার বাড়িতে সালিশি বসান। উক্ত সালিশি দরবারে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান ওয়ার্ড কমিশনার আবু তাহের মিয়ার বড় ভাই বিরাজ মিয়া, স্থানীয় মাতব্বর মাজু মিয়া, হবি মিয়া, মাইনুদ্দিন মিয়াসহ এলাকার অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষণ ঘটনার সত্যতা প্রমাণের পর ধর্ষণকারীকে ক্ষমা চাওয়া ও ৫হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করেন। এই বিচার মানতে নারাজ ভিকটিম ও ভিকটিমের দাদী। আরো জানা যায় এ সময় ভুক্তভোগীকে বিচার মানতে বিভিন্ন ভয়ভীতিও দেখানো হয়। বলা হয় তোমাদের বাড়িতো এই এলাকায় না তোমরা আর কি করতে পারবে। আমরা ৫ হাজার টাকা ধার্য্য করে দিয়েছি। আর তোমরা থাকো তোমাদের আর কিছুই হবে না। স্থানীয় সালিশিদের এমন বিচারে হতাশ ভিকটিম ও এলাকার তরুণ সমাজ। বিচারের রায় ঘোষণার পর এলাকার স্থানীয় যুবকরা এই বিচার সালিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ভিক্ষোব মিছিল করে রাস্তায় স্লোগান দিতে শুনা যায়। ‘ধর্ষণের বিচার ৫ হাজার টাকা হলে ধর্ষণ হবে ঘরে ঘরে’ ‘জহর আলী (জল্লার) গালে জুতা মারো তালে তালে’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তরুন নরসিংদী জার্নাল ডট কমকে বলেন, ধর্ষণকারী স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয় হওয়ায় ওই হতদরিদ্র পরিবারকে নানাহ ভয়ভীতি দেখিয়ে গোপনে সালিশি দরবার এর মাধ্যমে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে মিমাংসার চেষ্টা চালায়। সালিশি মাতাব্বররা ধর্ষণ বিচারের যে রায় দিয়েছেন তাদের নিজের মেয়ে হলে কি পারতেন এই রায় মেনে নিতে।
এই দিকে সুষ্ট বিচার না পেয়ে ভিকটিম বলেন, আমরা গরিব ও অন্য জেলার মানুষ হওয়ায় সুষ্ট বিচার পাইনি। আমরা এই বিচার মানিনা। আমরা গরিব বলে কি আমাদের কোনো মাণ ইজ্জৎ নেই।
আদালতের বাইরে পল্লি অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কমবেশি সালিশি ব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান। ছোটখাটো ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারির মতো ঘটনাও মীমাংসা হয় এ সব সালিশের মাধ্যমে। কিন্তু ধর্ষণের মতো ঘটনা স্থানীয় সালিশিরা স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে অন্যায় ও ধর্ষণের মতো অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে ময়মনসিংহের হতদরিদ্র পরিবাররের প্রতি চরম অন্যায় করেছে বলে দাবী তরুণ সমাজ ও এলাকাবাসীর। এই ঘটনার দুইদিন পর আজ ১৯ জুলাই সোমবার স্থানীয় তরুণদের সহযোগিতায় শিশুটির দাদী আয়েশা খাতুন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
এই বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারে সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে ফোনে পাওয়া যাইনি। কমিশনারে বড় ভাই বিরাজ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এই ঘটনার সত্যাতা শিকার করে বলেন। আমরা স্থানীয়ভাবে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সুষ্ট বিচারের লক্ষে কান ধরে উঠবসসহ ভিকটিমের কাছে ক্ষমা চাওয়া ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে দিয়েছি।
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুর রশিদ নরসিংদী জার্নাল ডট কমকে বলেন,”তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, শিশু ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা নেওয়া হয়েছে”। তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।