মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২১ অপরাহ্ন

মনোহরদীতে করোনার থাবায় পান চাষিদের মাথায় হাত

মাহবুবুর রহমান / ১৪৫০ বার
আপডেট : শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০২১
paan_chash_monohordi_narsingdi_journal
করোনা পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখে পান চাষিরা। ছবি: নরসিংদী জার্নাল

মাহবুবুর রহমান, নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী জার্নাল: করোনার থাবায় চাষিদের মাথায় পড়েছে হাত। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের প্রধান অর্থকরী ফসল পান। বিগত দিনে পান চাষে সাফল্যও পেয়েছেন তারা। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখে উপজেলার পান চাষিরা।

বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ থাকা এবং স্থানীয়ভাবেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা।

মনোহরদী উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির পানের চাষ করছে চাষিরা। চাষযোগ্য জাতের মধ্যে গয়াসর ও লালডিঙ্গি উল্লেখযোগ্য। তবে ঔষধিগুণ সম্পন্ন মিষ্টি সাচি পানও চাষ হয়।

এলাকায় পানের বরজকে বলা হয় টাকার ব্যাংক। কারণ ভালো একটি পানের বরজ যেন আল্লাহপাকের দেয়া টাকার অফুরন্ত ভান্ডার। কিন্তু করোনার থাবায় সে ভান্ডার এখন শূণ্যহয়ে কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পানের উৎপাদন ভালো হলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর পানের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

মনোহরদী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, মনোহরদীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পান চাষের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৯০% কৃষক। উপজেলার ৩০০ হেক্টর জমিতে পান চাষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিকটন। বাড়তি আয়ের জন্য অন্য পেশার সাথেও অনেকে করে থাকেন পানের চাষ।

উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর সকল গ্রামেই পানের বরজ আছে। তবে সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হয় লেবুতলা ও খিদিরপুর ইউনিয়নে। এছাড়াও চালাকচর, কৃষ্ণপুর, বড়চাপা, অর্জুনচর, শুকুন্দী, দৌলতপুর, একদুয়ারিয়া ইউনিয়নেও পানের চাষ হয়।

তারাকান্দী গ্রমের পান চাষি ফারুক মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে নরসিংদী জার্নাল কে বলেন, ‘পান করেই সংসার চলে আমার। এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে পানের আবাদ করেছি। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আবাদ খারাপ হয়নি। করোনার কারণে পানের দাম একেবারে কমে যাওয়ায় এনজিওতে ঋণগ্রস্ত হয়ে ছয় সদস্যের পরিবার নিযে খুবই কষ্টে দিন যাপন করছি। সরকার সহজ শর্তে ঋণ বা প্রণোদনা দিচ্ছে কিন্তু আমরাতো কিছুই পেলামনা।’

paan_chash_narsingdi_monohordi
একই গ্রামের পান চাষি বাচ্চু মিয়া নরসিংদী জার্নাল প্রতিবেদককে জানান, ‘এক বিঘা জমিতে পানবরজ করেছি বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ। বাজার ভালো হলে খরচসহ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার পান বিক্রি হতো। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম কমেনি বরং বেড়েছে। এনজিও থেকে কিস্তি নিয়ে বরজের পরিচর্যা করেছি। ঋণের ভার মাথায় নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এখন দিশেহারা।’

দাম কমার বিষয়ে রামপুর গ্রামের সুমন সর্দার নামে এক কৃষক জানান, ‘করোনার কারণে দূরদূরান্ত থেকে পাইকারী ক্রেতারা আসতে পারছেন না। এছাড়াও পান বিক্রির ছোট দোকান গুলো বন্ধ থাকায় পানের দাম কমে গেছে।’

শরীফপুর গ্রামের পান চাষি আব্দুস সহিদ বলেন, ‘করোনায় প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বেশি। আগে যে দামে পান বিক্রি হতো তার থেকে কয়েকগুণ কম দামে এখন বিক্রি করতে হচ্ছে। বরজ থেকে পান ভাঙতে যে শ্রমিক খরচ হয় পান বিক্রি করে সেই টাকাই হয়না। পান পঁচনশীল হওয়ায় বরজেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে পান রাখা যায় না। ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রতিটি চাষির।’

পান চাষি চাঁন মিয়া জানান, ‘করোনার পূর্বে বর্ষা মৌসুমে (১৪৪টি পানে ১ বিড়া, ২০ বিড়ায় এক কুড়ি) এক কুড়ি পান ৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে তা করোনার মধ্যে বর্ষা মৌসুমে ১৫শত থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে এমন কি অনেক সময় ৭/৮ শত টাকায়ও বিক্রি করতে হয়। এতে প্রায় লাখ টাকার লোকসান দিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছি। বিকল্প কিছু করার চিন্তা করছি।

paan_chash_monohordi_narsingdi_journal
কয়েকজন পাইকারী পান ব্যাবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন থাকায় দূরদূরান্তে পান পাঠাতে পারছেনা মাঝেমধ্যে পাঠাতে পারলেও ভাড়া বেশি দিতে হয় তাই কমদামে পান কিনতে হচ্ছে।’

সম্প্রতি সরেজমিনে রামপুর পান বাজারে গিয়ে দেখাযায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির জন্য চাষিরা পান নিয়ে এসেছেন। বাজারে ক্রেতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আগের মতো বাহিরের বড় পাইকার নেই। স্থানীয় ছোট ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা পান কিনছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, এখানকার পান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ৮৫% দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। কিছুদিন পূর্বে দেশের বাহিরেও রপ্তানির প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা হচ্ছেনা। করোনার কারণে এ বছর পানচাষিরা চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। তবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠলে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি। পান চাষিদের সবসময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিচ্ছেন।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সুম্পুর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  নরসিংদী জার্নাল বাংলাদেশ খবর মিডিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ

error: Content is protected !!
error: Content is protected !!