মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন, নরসিংদী জার্নাল: সম্ভাবনার ই-কমার্স ও গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিতে।
প্রযুক্তির নানামুখী ব্যবহারও দিন দিন বেড়ে চলেছে বিভিন্ন খাতে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বেচাকেনার অন্যতম মাধ্যম হলো ই- কমার্স।
ই- কমার্সের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের বিভিন্ন অফারে প্রলুদ্ধ করা, ক্লিন ইমেজ ও জনপ্রিয় তারকাদের দিয়ে বিজ্ঞাপন করিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র প্রতারণার ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের নিঃস্ব করে একেবারে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। প্রতারণার ফাঁদ পাতা ও গ্রাহকদের সরল বিশ্বাসটাই যেন তাদের মূল পুঁজি।
প্রতারিত এসব গ্রাহকরা অধিক লাভের আশায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে আজ দিশেহারা। চোখেমুখে ছিল যাদের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন, অল্প সময়ে বড় লোক হওয়ার বাসনা, তারাই আজ গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। শুধুমাত্র লোভের বশবর্তী হয়েই তাদের আজ এমন করুণ ও দুঃখজনক পরিণতি।
এসব গ্রাহকেরা একটিবারও ভাবেনি যে, ইতিপূর্বে ডেসটিনি, ইউনি-পে,যুবক নামের কোম্পানিগুলো প্রতারণা করে এদেশের হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এসব ঘটনা থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি। উল্টো অতি মুনাফার লোভে অস্বাভাবিক, অকল্পনীয়, অবাস্তব সব অফারের ফাঁদে পা দিয়ে আজ তারা ফতুর।
তারা একবারও ভেবে দেখেনি, বিশ্বের বিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এ্যামাজন, আলীবাবা – গ্রাহকদের এ ধরণের কোন অকল্পনীয়, অবাস্তব, অস্বাভাবিক অফার দেয় না। শুধু মাত্র গ্রাহকরাই নন, এই ধরণের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া পণ্যের বিপরীতে শত শত ব্যবসায়ীও আজ প্রতারণার শিকার।
এ সমস্ত গ্রাহকরা অতি প্রাচীন প্রবাদ-” লোভে পাপ,পাপে মৃত্যু” – এটিও ভুলে গিয়েছিল। তাইতো আমাদের মহামান্য হাইকোর্ট একটি রিটের শুনানিতে ই – কমার্সের ফাঁদ থেকে বাঁচতে গ্রাহকদের লোভ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ই- কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলোতে সুষ্ঠু নজরদারি ও বিদ্যমান নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকায় এরা গ্রাহকের সঙ্গে সহজেই প্রতারণা করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে।
ফলশ্রুতিতে লাখ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা। নিজেরা আয়েশী জীবনযাপন করছে। এসব অর্থ তারা বিদেশে পাচার করছে এবং নিজেরাও বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি তদন্তের আওতাধীন এমন ডজনখানেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মূলতঃ ই ভ্যালি,ই- অরেঞ্জ ও ধামাকাই বেশিরভাগ ভোগান্তির জন্য দায়ী। আবার কেউ কেউ ই- কমার্সের নামে নিষিদ্ধ এম এল এম ব্যবসাও করছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এখনই তার লাগাম টেনে ধরতে হবে। গ্রাহকরা যেন কোনভাবেই প্রতারিত না হয় সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
গ্রাহকদের অর্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের টুটি চেপে না ধরলে এ দেশের লাখ লাখ গ্রাহক প্রতিনিয়তই এভাবে প্রতারিত হতে থাকবে,যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
এজন্য প্রয়োজন ডিজিটাল ই- কমার্স অ্যাক্ট এবং এর সুষ্ঠু ও যথাযথ প্রয়োগ। কেননা ই- কমার্স শুধু বাণিজ্য নয়,কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও বড় উৎস। দেশের হাজার হাজার বেকার ই- কমার্সের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে পরিবার, সমাজ তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই ওয়েবসাইটের লেখা আলোকচিত্র, অডিও ও ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।