এক বনে এক হরিণ ও একটি বানর বাস করত। হরিণ আর বানরের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল গলায় গলায়। প্রতিদিন হরিণ যখন বনের ভেতরে সবুজ ঘাস খেতে যায়। বানরটা ও ঠিক হরিণের পিছু পিছু ছুটে যায়। হরিণ মাটিতে মনের আনন্দে ঘাস খায় আর বানর গাছের এ ডাল থেকে ও ডালে যায়। মাঝে মাঝে গাছ থেকে পাতা ছিড়ে মাটিতে ফেলে হরিণ বন্ধুর সামনে। হরিণ গাছের কচি পাতা খায় আর মনের আনন্দে লাফালাফি করে। হরিণ আর বানরের বন্ধুত্ব দেখে শেয়ালের বড় হিংসা হয়। সে হরিণ আর বানরের বন্ধুত্ব নষ্ট করার জন্য পরিকল্পনা করে।
মাঝে মাঝে শেয়ালটা হরিণকে বাগে আনার জন্য হরিণের ছানা গুলোকে তাড়া করে। কিন্তু সে হরিণ ছানার ক্ষতি করে না। কারণ সে প্রথমে ছানার সাথে বন্ধুত্ব করতে চান। তবে তার মনে তো তখন অন্য চিন্তা ভর করে আছে। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকে। হঠাৎ একদিন এই দৃশ্যটা বানরের নজরে পরে। শেয়াল হরিণের ছানা পিছু তাড়া করে। বানর শেয়ালের এই কান্ড দেখে শেয়ালকে শিক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করে। একদিন বানরের একটি দল মিলে শেয়ালকে বনের মধ্যে ঘিরে ধরে। শেয়ালের পালানোর পথ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে একটি বানর শেয়ালের পিছন দিক থেকে এসে লেজে টান দিয়ে লাফ দিয়ে গাছে উঠে যায়। এভাবেই শেয়ালকে শিক্ষা দিতে থাকে সবাই মিলে। এদিকে শেয়াল প্রচন্ড রেগে যায় বানরের উপর সে অপমানের বদলা নিয়েই ছাড়বে যে ভাবেই হোক।
একদিন শেয়ালটি হরিণের বাচ্চাটাকে কৌশলে মায়ের থেকে দূরে নিয়ে যায়। হরিণ আর বানরের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হরিণ ছানাটিকে একটি গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়। আর ফিরে এসে হরিণের কাছে বলে বানরটি তার ছানাকে দূরে জঙ্গলে বাঘের কাছে দিয়ে এসেছে। এই শুনে হরিণ কাদতে কাদতে বানরের কাছে যায়। তখন বানর তার বাচ্চাদের নিয়ে গাছের ডালে শুয়ে ছিল। হরিণ বানরের কাছে জানতে চাইলে বানর কেনো এই ঘৃণ্যতম কাজটি করলো। সেদিন বানর ও হরিণের মধ্যে সম্পর্ক ভাঙন দেখা দেয়। বানর হরিণকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে হরিণ কিছুতেই বুঝতে চায় না।
বানর ভাবতে থাকে কে তাদের এতো সুন্দর সম্পর্কটা ভাঙলো। হঠাৎ শেয়ালের কথা মনে হলো। বানরটি চুপি চুপি শেয়ালের পিছু নিতে থাকে। শেষে এক সময় দেখে সে হরিণের বাচ্চাটিকে একটি গর্তের মধ্যে ফেলে রেখেছে। এটা দেখে বানর খুব রেগে যায়। সেদিনের মত সবাই মিলে আবার শেয়ালের পিছু নেয়। আর লেজ নিয়ে টানাটানি করে এক পর্যায়ে শেয়ালের লেজে কামড় দিয়ে লেজ কেটে দেয়। শেয়ালটি লজ্জায় অপমানে সে বন ত্যাগ করে। এদিকে বানর হরিণের বাচ্চা ফিরিয়ে দিলে তাদের বন্ধুত্ব আবার আগের মত ঠিক হয়ে যায়।
লেখকঃ কবি ও গল্পকার